উৎপাদনের বাড়তি খরচ হিসেবে বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুৎ বোর্ডের (বিআরইবি) কাছে বাড়তি দাম ধরে সামিট পাওয়ার লিমিটেড যে ১১০০ কোটি টাকা দাবি করে আসছে, তা আর দিতে হবে না বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পল্লি বিদ্যুতের ঢাকা, কুমিল্লার ও নরসিংদী সমিতির আপিল গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে বিআরইবি'র পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, মুরাদ রেজা, মেহেদী হাছান চৌধুরী ও শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। সামিট পাওয়ার লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
পরে আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সালিশি আদালতে মামলার সময় দাবি করা টাকার পরিমাণ ছিল ৩৫০ কোটি টাকার মতো, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১১০০ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ আদালত আপিল গ্রহণ করায় সরকার তথা বিইআরবিকে এ টাকাটা আর দিতে হচ্ছে না। আর চুক্তি অনুযায়ী দামেই বিইআরবিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এসপিএল।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা, সে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুৎ বোর্ড (বিআরইবি) বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে অনুযায়ী অনুমোদনও পায়। অনুমোদন পাওয়ার পর ‘প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি অব বাংলাদেশ, ১৯৯৬’ এর আওতায় ২০০০ সালে সামিট পাওয়ার লিমিটেড (এসপিল) ও বিআরইবি'র মধ্যে ‘পাওয়ার পারচেস অ্যাগ্রিমেন্ট -পিপিএ’ চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী- ঢাকার আশুলিয়ায়, কমিল্লার চান্দিনা ও নরসিংদীর মাধবদীতে ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে এসপিএল। পরবর্তীতে ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে সম্পূরক আরো দুটি চুক্তি হয় এসপিএল ও বিআরইবি'র মধ্যে। চুক্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য এসপিএলকে শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য শুল্কমুক্ত গ্যাস আমদানির সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়। বিনিময়ে সরকার নির্ধারিত বার্ক সাপ্লাই ট্যারিফ (বিএসটি) দাম অনুযায়ী বিইআরবিকে বিদ্যুৎ দেবে এসপিএল। এভাবেই চলে আসছিলো। কিন্তু চাহিদা মেটাতে সরকার ২০০৮-০৯ সালে ডিজেল, কয়লা দিয়ে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। তখন বিএসটি মানে বিদুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
২০১১ সালে বেড়ে যাওয়া উৎপাদন খরচ ধরে বিইআরবি’র কাছে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দাম চায় এসপিএল। এ নিয়ে ২০১৩ সালে সালিশি আদালতে মামলা করে এসপিএল। তখন বিইআরবির কাছে এসপিএলের দাবি করা টাকার পরিমাণ ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট এসপিএল’র পক্ষে রায় দেন আদালত।
পরে এ রায় পুনর্বিবেচনা করতে ওই ট্রাইব্যুনালেই আবেদন করে বিইআরসি। ওই বছর ১৭ নভেম্বর এ আবেদন নাকচ করলে এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট করে বিইআরবি। হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন। রুলে সালিশি আদালতে রায় ও সম্পূরক চুক্তির একটি ধারার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করে রায় দেন। ফলে সালিশি আদালতের রায়ই বহাল থাকে। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিইআরবির ঢাকা, কুমিল্লা ও নরসিংদী সমিতি। সেসব আপিল গ্রহণ করে রায় দিলেন আপিল বিভাগ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস